উত্তরঃ ১৮৫৪ সালের উডের
ডেসপ্যাচ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে মানোন্নয়নের পরিবর্তে সাধারণতঃ
সম্প্রসারণের নীতি অনুসৃত হতে থাকে। লর্ড কার্জনের আমলে এই শিক্ষানীতি আমূল
পরিবর্তন হয় । লর্ড কার্জন ১৮৮২ সালে গৃহীত শিক্ষার উদারনীতির বিরুদ্ধে মত পোষণ
করে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের এবং সর্বস্তরের শিক্ষায় সরকারী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে
উন্নত শিক্ষার কর্মসূচী গ্রহণ করেন। দেশের জাতীয়তাবাদী নেতাদের সঙ্গে কার্জনের যে
বিরোধ ঘটেছিল তার মূলে ছিল সেদিনকার রাজনৈতিক চেতনা। ইংরেজ শাসনের প্রতি আমাদের
বিরুদ্ধ মনোভাব কার্জনের শিক্ষানীতিকে আচ্ছন্ন করে রাখার ফলে তাঁর শিক্ষানীতির
অনেক সংস্কারমূলক দিক আমাদের দৃষ্টিতে পড়েনি। স্বাধীন ভারতে ডক্টর ডি.এস. কোঠারীর সভাপতিত্বে গঠিত-শিক্ষা
কমিশন (১৯৬৪-৬৬) ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত মানের অবক্ষয় লক্ষ্য করে শিক্ষার মান
বজায় রাখার জন্য সুপারিশ করেছেন।ভারতের শিক্ষাকে আমরা এই শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে
সর্বপ্রথম সামগ্রিকভাবে দেখবার সুযোগ পেয়েছি। কিন্ত এখানে উল্লেখ্য যে, পরাধীন
ভারতে লর্ড কার্জন যে শিক্ষা-কমিশন নিয়োগ করেন সেই শিক্ষা-কমিশন সকল স্তরের শিক্ষা
সম্বন্ধে দৃষ্টি রেখেছেন। ১৯০১ সালে লর্ড কার্জন সিমলাতে এক শিক্ষা সম্মেলন আহ্বান
করেছিলেন। সেই সম্মেলনে ভারতের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার দুরবস্থা সম্বন্ধে
উল্লেখ করা হয়। শিক্ষার অসমবন্টন এবং উচ্চ শিক্ষাখাতে অপরিমিত অর্থব্যয় এবং
মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাখাতে ব্যয়সঙ্কোচ নীতিকে এই সম্মেলন সমালোচনা করে। সম্মেলনে
পরিবেশিত তথ্য ও সমালোচনার ভিত্তিতে কার্জনের শিক্ষানীতিকে বিবেচনা করলে শিক্ষার
ক্ষেত্রে তাঁর অবদান স্বীকৃত হবে।শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সেদিন সরকারী নিয়ন্ত্রণ
ছাড়া সম্ভব ছিল না- গুণগত উন্নতি সাধনে যদি কার্জন সরকারী নিয়ন্ত্রণ প্রবর্তন
করেন, তবে সেটা খুব অন্যায় ছিল না। আজও শিক্ষার গুণগত উন্নতির জন্য আমরা সরকারের
মুখাপেক্ষী । যা হোক, কার্জন শিক্ষার লক্ষ্য বা আদর্শ-নির্ণয়ে এবং শিক্ষার কাঠামো
নির্ধারণের কোন উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধন করেননি।তবে তিনি কতগুলি নির্দিষ্ট বিশেষ
বিষয়ে সংস্কার সাধন করতে চেয়েছিলেন। সেগুলি এখানে উল্লেখ করা হল-
1.
লর্ড কার্জনের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় আইন গৃহীত হবার(১৯০৪) ফলে
স্নাতকোত্তর পাঠ ও গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হল। এই আইনে কলেজের অনুমোদন
সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কঠোরতা অবলম্বন করায় শিক্ষামানের কিছুটা উন্নতি হয়।
2.
লর্ড কার্জনের প্রচেষ্টায় ১৯০৪ সাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়
গুলিকে সরকারী সাহায্য দেওয়া হতে থাকে এবং ১৯১২ সালে এই সাহায্যের ব্যবস্থা
সরকারের একটি দ্বায়িত্বে পরিগণিত হয়।
3.
উচ্চ শিক্ষায় সাহায্যের সঙ্গে সঙ্গে কারিগরী শিক্ষা, সাধারণ
শিকশা, কৃষি শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা প্রভৃতি সকল স্তরের শিক্ষার
জন্য অতিরিক্ত পৃথক পৃথক সরকারী সাহায্যের ব্যবস্থাও লর্ড কার্জন প্রবর্তন করেন।
4.
লর্ড কার্জন মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যসূচীর সংস্কার সাধনের
চেষ্টা করেন। ইংরাজী শিক্ষার উন্নয়ন, মাতৃভাষা অধ্যায়ন, বহুমুখী পাঠ্যসূচী
প্রবর্তন, কারিগরি শিক্ষার জন্য ‘বি-কোর্সের’ ব্যবস্থা প্রভৃতি সংস্কারকার্যে তিনি
অগ্রণী হন।
5.
উচ্চ শিক্ষার পাঠ্যসূচীতে কার্জনের প্রচেষ্টা ও নির্দেশে
সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্র, কারিগরী বিদ্যা, পশুপালন, বিজ্ঞান, বানিজ্য
ও চারুকলা ইত্যাদি বিষয় সংযোজিত হয়।
6.
শিক্ষাক্ষেত্রে সুশাসনের জন্য লর্ড কার্জন কেন্দ্রীয়
প্রাশাসনে শিক্ষা-অধিকর্তা(D.P.I) নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।
7. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাস্তরে লর্ড কার্জন বেসরকারী শিক্ষার উদ্যোগকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষার সংকোচন ও নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষপাতী হলেও প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে তিনি শিক্ষা-প্রসার(Expansion of Education) নীতিকে গ্রহণ করেন।প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দ্বায়িত্ব বলে কার্জন স্বীকার করেন। প্রাদেশিক রাজস্ব ও জেলা বোর্ডের আয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অধিক পরিমাণে অর্থ ব্যয় করার কথা কার্জন সুপারিশ করেন।স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলিকে তাদের শিক্ষাব্যয়ের অর্ধেক সরকার থেকে সরাসরি গ্রান্ট হিসেবে দেবার ব্যবস্থা করেন।
চমৎকার.....
ReplyDeleteIt's a history of our education.
ReplyDelete