Tuesday, 22 December 2015

১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার বিষয়বস্তু ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার উন্নয়নের জন্য যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেগুলি আলোচনা করো ।

উত্তরঃ ১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার বিষয়বস্তু ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে-
(১)সংস্কৃতিঃ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে শিক্ষাব্যবস্থা এগিয়ে যাবে। শিক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । এইসব বিষয় সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষণ ও গভেষণা কেন্দ্রগুলিকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
(২)মূল্যবোধঃ জাতীয় শিক্ষানীতির অন্যতম মৌলিক উদ্দেশ্য সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় সংবিধান উল্লিখিত মূল্যবোধের সৃষ্টি এবং সংরক্ষণ করা; যেমন- ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সহনশীলতা, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব । সর্বোপরি মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক চেতনা জাগাতে হবে।
(৩)ভাষাঃ ১৯৬৮ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে ভাষানীতি সম্পর্কে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তা অবিলম্বে কার্যকর করার সুপারিশ করা হয় । অহিন্দি-ভাষী রাজ্যগুলিতে হিন্দির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় ।
(৪)বই ও লাইব্রেরিঃ উচ্চমানের পাঠ্যপুস্তক লেখা ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়া হয় । সেই জন্য ভারতীয় ভাষায় বিদেশি পুস্তকের অনুবাদ প্রয়োজন। বইয়ের মানোন্নয়নের সঙ্গে লাইব্রেরিগুলির উন্নয়ন প্রয়োজন।
(৫)মাধ্যম ও শিক্ষাপ্রযুক্তিঃ প্রযুক্তিবিদ সংগ্রহ-সংক্রান্ত তথ্যাবলি জানতে ও প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ, শিক্ষক-শিক্ষণ, শিল্পকলা ও কৃষি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রযুক্তি ব্যবহার করা দরকার । শিক্ষাদান ও শিক্ষকের গুণগত মানোন্নয়ন, শিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যম ও উপকরণের জন্য শিক্ষাপ্রযুক্তির ব্যবহার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
(৬)কর্ম-অভিজ্ঞতাঃ শিক্ষাক্ষেত্রে কর্ম-অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ অংশ । কর্ম-অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্তরে উন্নত বৃত্তিমুখী কোর্স নির্বাচনে সুযোগ সৃষ্টি করবে। তাই শিক্ষার ধাপে ধাপে কর্ম-অভিজ্ঞতার অভীক্ষা প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের স্তর ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(৭)শিক্ষা ও পরিবেশঃ শিশু থেকে সকল বয়সের সকল স্তরের মানুষের জন্য পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ শিক্ষা অত্যান্ত জরুরি, এই কারণে শিক্ষার সকল স্তরে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়টিকে পাঠ্যক্রমের মধ্যে রাখতে হবে ।
(৮)গণিত শিক্ষাঃ বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতির জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত গণিত শিক্ষা । তাই গণিতকে শিক্ষার সকল স্তরে গুরুত্ব দিয়ে বুঝানো প্রয়োজন । অংক হবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আবশ্যকীয়।
(৯)বিজ্ঞান শিক্ষাঃ বিজ্ঞান শিক্ষাকে এমনভাবে সংগঠিত করা দরকার যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান সচেতনতা, সত্যানুসন্ধানী, সৃষ্টিধর্মীতা, ব্যক্তিনিরপেক্ষতার প্রবণতা,সৌন্দর্যপ্রীতি ইত্যাদি মূল্যবোধগুলি জাগতে পারে । বিজ্ঞান দশম শ্রেণি পর্যন্ত হবে আবশ্যকীয় । মেয়েরা যাতে বিজ্ঞান, কারিগরি, বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন পেশাগত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
(১০)খেলাধুলা ও শারীরশিক্ষাঃ প্রস্তাবনাপত্রে বলা হয়েছে- শারীরশিক্ষার জন্য স্কুলে, কলেজে, খেলার মাঠ, সরঞ্জাম, প্রশিক্ষক, শারীরশিক্ষক, শহরাঞ্চলে খোলা জায়গায় খেলাধুলার জন্য সংরক্ষিত ক্ষেত্র রক্ষা করা প্রভৃতি পরিকাঠামোগত উন্নতি ঘটাতে হবে। বোর্ডিংসহ স্পোর্ট কমপ্লেক্স তৈরি করতে হবে এবং NSS কে আরও প্রসারিত ও মজবুত করতে হবে।

(১১)যুবসম্প্রদায়ের ভূমিকাঃ জাতীয় ও সামাজিক বিকাশে যুবসম্প্রদায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তার বাইরে যুবসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধির সুপারিশ করার উদ্দেশ্য NSS,NCC প্রভৃতি কর্মসুচিকে আরও জোরদার করতে হবে। 

No comments:

Post a Comment