Tuesday, 22 December 2015

Analyze the sectors leading to the rise of National Consciousness during the British rule, How did it spread ideas on Education.

ভারতের ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে মধ্যযুগে ভারতে বিদেশী আক্রমণের ঢেউ এসছিল। হূন,তুর্কি,মোগল এবং শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা ভারত আক্রমণ করে ভারতকে দীর্ঘদিন শাসন করেছিল । কিন্ত ইংরেজ শাসনের সময়েই ভারতে ভারতবাসীদের মধ্যে শিক্ষার চেতনা জাগরিত হতে শুরু করে । এই চেতনা পরবর্তীকালে ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার লাভ করে । এর পেছনে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার শিক্ষা ও শাসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই দ্বায়ী ছিল।ব্রিটিশ শাসনের সময়ে ভারতীয়দের চেতনা জাগরিত হওয়ার কারণগুলি হল-
ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্যমূলক শিক্ষা নীতিঃ- ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ছিল ভারত শাসন করার জন্য কিছু অনুগত কর্মচারী তৈরি করা ।এই কর্মচারীদের দিয়ে যাতে পরবর্তীকালে নিজ স্বার্থকে সফলভাব রুপায়িত করা যায় এটাই ছিল ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য ।
বিদেশিদের দ্বারা শিক্ষা প্রশাসন নিয়ন্ত্রনঃ- ব্রিটিশরা ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতো। ভারতীয়দের শিক্ষাদান ব্রিটিশদের প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্য ছিল না ।ব্রিটিশদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের ব্যবসার সুবিধার জন্য কর্মী সৃষ্টি করা ।যার জন্য ব্রিটিশরা ভারতীয়দের নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে দিতনা । ভারতীয়দের উচ্ছ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হত না । এর প্রতিফলন হিসাবে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় চেতনার সৃষ্টি হতে শুরু করে। ভারতীয়রা স্পষ্ট বুঝতে পারে যে ভারতীয়দের প্রতি ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
ইংরেজি শিক্ষার প্রচলনঃ- ব্রিটিশরা উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে কোম্পানির স্বার্থে শিক্ষা নীতির পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। যাতে ভারতে ইংরেজি শিক্ষা চালু করা যায়এজন্য মিশনারি উদ্যোগ, বেসরকারী এবং সরকারী প্রচেষ্টায় ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। এতে ভারতীয়দের মধ্যে স্বাধীনতা ও জাতীয় চেতনা সম্পর্কে নতুন ধারণার সৃষ্টি হয়।
পুঁথিগত শিক্ষাঃ- ব্রিটিশরা ভারতকে শাসন করার উদ্দেশ্যে তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য ভারতে পুঁথিগত বিদ্যার বা শিক্ষার বিস্তার করতে শুরু করে। তার সাথে সাথে ইংরেজি ও বিজ্ঞান উপরও জোর দিতে থাকে। কিন্ত উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য সুযোগ দেওয়া হত না। ব্রিটিশদের মধ্যে সাদা ও কালোর মধ্যে যে পার্থক্য তা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ চেতনা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা সৃষ্টি করে ।          
ব্যবহারিক শিক্ষার অভাবঃ- ব্রিটিশদের অধীনে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয় তাতে শিক্ষার্থীদের জীবনের উন্নয়নে বা জীবন প্রতিষ্ঠার শিক্ষা চেতনা দেওয়া হত না ।কারণ ব্যবহারিক শিক্ষা লাভে ভারতীয়দের সুযোগ দেওয়া হত না। ফলে মধ্যবিত্ত কিছু ভারতীয় বিদেশে শিক্ষা লাভ করতে চেষ্টা করে । ভারতীয় শিক্ষায় কিছু করণিক, গাড়িচালক, সৈন্য, ব্যাঙ্ক কর্মচারী প্রভৃতির কাজ করতে পারে। যার ফলে ভারতকে শাসন ও শোষণ করতে ব্রিটিশদের সুবিধা হবেএর ফলে ভারতীয়রা, ভারতীয় ও ব্রিটিশদের মধ্যে যে পার্থক্য তা উপলব্দি করতে পারে । ফলে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ,একতাবোধ স্বাধীন চেতনা জন্মাতে শুরু করে । 
গণ শিক্ষাকে অবহেলাঃ- সমস্ত ভারতীয়রা শিক্ষা লাভ করুক ব্রিটিশরা তা চাই না ।কারণ ভারতীয়রা শিক্ষিত হলে বেশীদিন আর ভারতকে শাসন ও শোষণ করা যাবে না। তাই ব্রিটিশরা গণশিক্ষাকে অবহেলা করত। কিন্ত যে মধ্যবিত্ত সন্তান শিক্ষা লাভ করেছে তারা এই বিষয়টি উপলব্দি করতে পারে ফলে এরা ব্রিটিশের শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে গণ শিক্ষা দিতে শুরু করে । এতে করে যেমন শিক্ষা চেতনা বৃদ্ধি পেল, তেমনি ব্রিটিশ বিরোধী চেতনা বৃদ্ধি পেতে আরম্ব করে।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগের অভাবঃ-ব্রিটিশরা যে শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতে চালু করেছিল তা ছিল নিম্ন স্তরে । উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভারতীয়দের সুযোগ ছিল না। ফলে ইচ্ছা করলেও ভারতীয়রা উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারত না । কেবলমাত্র কিছু ধনি ব্যক্তি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যায়।এই শ্রেণির লোকেরা বিদেশে পড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে দেশের মানুষের প্রতি চেতনা অর্থাৎ জাতীয় চেতনা প্রসার ঘটাতে শুরু করে । যা পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রুপ দেয়।  
ভারতীয়দের দ্বারা নৈতিক মানের প্রচেষ্টাঃ- যে সকল ভারতীয় বিদেশে ও স্বদেশে শিক্ষা লাভ করে তারা সরকারী চাকরিতে যোগদান করে । তারাই ব্রিটিশ শাসনে থেকে ভারতীয় জাতীয় সচেতনতামূলক জাগরণের জন্য নৈতিক মানের উন্নতির প্রচেষ্টা চালায় । কিছু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রণীর উন্মেষ, উকিল, ডাক্তার,শিক্ষক,সাংবাদিক, ব্যাঙ্ক কর্মচারী প্রভৃতি ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় সচেতনতা প্রসার ও প্রচারের জন্য সকল অংশের মানুশকে অনুপ্রাণিত করে তোলে।
আন্তর্জাতিক ঘটনার প্রভাবঃ- একদিকে ব্রিটিশের অত্যাচার অন্যদিকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে বিশ্বের কিছু আন্তর্জাতিক ঘটনা যেমন, চিন, ভিয়েতনামের আন্দোলন জার্মানি, জাপানের জাতীয়তাবাদ, প্রভৃতি ঘটনা ভারতবাসীদেরকে জাতীয়তাবাদের জন্য উৎসাহদান করে।
উপসংহারঃ- একথা ঠিক যে, ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসন যদি না আসত তাহলে ভারত আজও বিচ্ছিন্নতাবাদের অন্ধকার নিমজ্জিত থাকত। ব্রিটিশ শাসনের অনুপ্রেরণায় ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। যদিও এক্ষেত্রে ব্রিটিশদের নেতিবাচক অনুপ্রেরণা ছিল ।

সর্বোপরি ব্রিটিশের প্রবর্তিত ইংরেজি তথা পাশ্চাত্য শিক্ষা ভারতবাসীকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করেছিল। 

No comments:

Post a Comment