Monday, 28 December 2015

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন কী?জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করো ।


জাতীয় শিক্ষা বলতে সেই শিক্ষাকে বোঝায়, যে শিক্ষায় সকলের সমানাধিকার থাকবে, যে শিক্ষা জাতির রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার,মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করে জাতির জীবনরস পুষ্ট করবে এবং সুদীর্ঘকাল ধরে জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় সাহায্য করবে। এই আদর্শ ও নীতির উপর ভিত্তি করে বিংশ শতকের প্রথম দিকে স্বদেশী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষাক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল, তাকেই জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন বলে।
  জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তনের ফলে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাও চলতে থাকে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থের অনুকুলে । ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষার সঙ্গে দেশের নাড়ীর কোন সম্পর্ক ছিল না। জাতীয় নেতৃবৃন্দ ইংরেজ প্রবর্তিত এই শিক্ষা ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন, এবং দ্রুত জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের সূচনা ঘটল। ১৯০১ সালে রবিন্দ্রনাথ বোলপুরে ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে আবাসিক বিদ্যালয় এবং ১৯০৩ সালে প্রাচীন ভারতের তপোবনের আদর্শে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ঈঙ্গ-বৈদিক কলেজ স্থাপন করেন। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ের গতি সঞ্চার করেছিল বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন।বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বয়কট ও স্বদেশী আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান বন্ধ করার উদ্দেশে সরকার কার্লাইল সার্কুলার জারি করে। ছাত্র নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ার রংপুরে প্রথম জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৫ সালে। ১৯০৬ সালে কলকাতায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়। সম্পূর্ণ জাতীয় আদর্শে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ৯২ জন সদস্যকে নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়। এই বছরই সতীশচন্দ্রের ডন সোসাইটি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে মিশে যায়।জাতীয় শিক্ষা পরিষদ জাতীয় স্কুল ও কলেজ স্থাপন করে। বিদ্যালয় স্তর থেকে আরম্ভ করে, উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত এক ব্যাপক ও বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিল জাতীয় শিক্ষা পরিষদ।
  কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৯০৬ সালে তারকনাথ পালিত কারিগরি শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। রাসবিহারী ঘোষ ছিলেন এর সভাপতি। সমিতি ওই বছরই কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট স্থাপন করে।
  জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের সময়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার উদ্দেশে গোখলের ১৯১০ সালে এবং ১৯১১ সালে পর পর দুটি শিক্ষা বিল “রজকীয় আইন পরিষদে’ উপস্থাপন করেন। কিন্ত সরকারের উদাসীনতায় এগুলি কার্যকর হয়নি।

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ফলে পূর্ববঙ্গে ৪০টি এবং পশ্চিমবঙ্গে ১১টি জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে তিলক বোম্বাইতে জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । এছাড়া মাদ্রাজ ও অন্ধ্রপ্রদেশে অনুরুপ বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। 

Wednesday, 23 December 2015

What is the various functions of DIET? Define the structure of a DIET.


 A District Institutute of Education and Training(DIET)is a grassroots level institution, with the district as the basic unit for educational planning, for evolving strategies for catering to district level specific needs. A DIETs mission is “to provide academic and resource support at the grassroots level for the success of various strategies and programmes being undertaken in the areas of elementary and adulteducation”. DIETs ahve been assigned a pace-setting role in two aspects viz...,
(a)              excellence in the institute’s own work; and
(b)             helping the elementary and adult education systems in the district in achieving excellence. the three main functions of a DIET are:
(1)             Training(both of induction i.e pre service level and continuing i.e in service level.
(2)             resource support(extension/guidance, development of materials,aids,evaluation tools etc.
(3)             action research .
Besides, a DIET has to devote its primary attention to the promotion of education among
(a)girls and women,
(b)Scheduled castes and Scheduled tribes,
(c) Minorities,
(d)the handicapped, and
(e)other eeucationally disadvantaged and marginalized groups like working children, slum dwellers etc. with a view to enabling a DIET to attain its mission and fulfil its assigned functions it comprised the following seven barnches or units:
(1) pre-service Teacher Education(PSTE) Branch to provide induction level learning.
(2) Work-experience(WE) Branch to cater to the need for vocationalisation of education and to provide a variety of work-experience related inputs.
(3)Distrcit Resource Unit(DRU)to assist education authorities in planning and coordination of training programmes for Alternative Education/Non-formal Education personnel throughout the district and to provide neccessary support to such programmes organised outside the DIET and to act as a nodal agency in this area.
(4) in-service programmes, field interaction and innovation coordination(IFIC) Branch to identify te needs of elementary teachers in the district and organise programmes for in-service training to assess the quality and efficacy of such programmes within as well as outside the DIET,etc.
(5) Curriculum, Material Development and Evaluation(CMDE) Branch to develop curricular units, techniques and gudelines for continuous and summativelearner evaluation, tset scales and other instruments for diagnostic testing and remedial programmes etc.
(6) Education Technology (ET) Baranch to develop simple, effective and low cost teaching aids for elementary education and elementary teacher education.

(7) Planning and Management(P&M) Branch to maintain an appropriate data-base for the district for planning exercises for attaining goals related to universalisation of primary and elementary education, and national literacy mission etc. 

Tuesday, 22 December 2015

What is Panchayati Raj? Discuss the composition and functions of Gram Panchayat.(প্রশ্ন. পঞ্চায়েতীরাজ বলতে কি বোঝায়? গ্রাম পঞ্চায়েতের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।)

গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতিকে সার্থকভাবে রূপায়ণের জন্য ভারতবর্ষে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি জানানো হয়েছে। গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ভারবর্ষে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থাটি গড়ে তোলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, পঞ্চায়েতীরাজ ও গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ সমাজ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। গ্রামের মানুষদের স্বার্থকে পরিপূর্ণ করতেই পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
  গ্রাম পঞ্চায়েত ৫-৩০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় । প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হবে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত সদস্যগণ এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি ছাড়া সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নিয়ে। পঞ্চায়েত সমিতির যে সমস্ত সদস্য গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হবেন তাঁরা প্রধান বা উপপ্রধানের পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না । তাঁরা কোন ভোট দিতে পারবেন না বা কর্মকর্তা হতে পারবেন না। মোটামুটিভাবে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসন আছে।

  গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অর্থনৈতিক ও বিষয় ও প্রশাসন পরিচালনা করেন। তিনি পঞ্চায়েতের দলিল, নথিপত্র, সীল প্রভৃতি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তিনি পঞ্চায়েতের নিজের কর্মচারীদের এবং রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রেরিত অফিসার ও কর্মচারীদের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করেন। পঞ্চায়েত কর্তৃক নিযুক্ত কোনো অফিসার বা কর্মচারীকে অপ্রয়োজনীয় মনে করলে তিন মাসের নোটিশ বা তিন মাসের বেতন দিয়ে অব্যাহতি দিতে পারেন প্রধান। আবার অসদাচারন বা কাজকর্মের গাফিলতির কারণে পঞ্চায়েতের কোন অফিসার বা কর্মচারীকে প্রধান সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারেন ।  

As per the National Policy of Education, (1986) what is the role of DIET's in the professional development of teachers.

আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভের পর রাধাকৃষ্ণাণ,মুদালিয়ার ও কোঠারি কমিশন শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছিলেন । কিন্তু বাস্তবে সেগুলি রূপায়িত হয়নি। বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষণের যে ব্যবস্থা প্রচলিত আছে তাতে শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র ডিগ্রি লাভ করে, কিন্তু শিক্ষক হিসাবে তাদের গুণগত মানের বিশেষ কোন উন্নতি ঘটে না । শিক্ষক-শিক্ষণকে যদি শিক্ষকের গুণগত মানের উন্নতির উপায় হিসাবে কাজে লাগাতে হয় তাহলে এটিকে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। ১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষক-শিক্ষণকে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া হিসাবে গ্রহণ করবার কথা বলা হয়েছে এবং একথাও বলা হয়েছে যে নতুন শিক্ষানীতির সাফল্যে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষক শিক্ষণের উপর অনেকখানি নির্ভর করবে। এই উদ্দেশ্যে জাতীয় শিক্ষানীতিতে District Institute of Education and Training(DIET) স্থাপন করে প্রাথমিক, নন-ফরম্যাল ও বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্য থেকে বাছাই করে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলি তৈরি করতে হবে। এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষক যতদিন চাকরিরত থাকবেন ততদিন তাঁকে রিফ্রেসার কোর্স,শর্ট কোর্স ট্রেনিং,সেমিনার, সিম্পোজিয়াম প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাঁর পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করবার অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

   কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৮৭ সালে শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির পুনর্গঠনের জন্য সারা দেশে একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করেন। এই প্রকল্প অনুয়ায়ী এদেশে বেশ কতগুলি প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠিত ও উন্নীত করা হয়েছিল এবং এগুলির নাম দেওয়া হয়েছিল ডায়েট(DIET)। অষ্টম ও নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে প্রত্যেক রাজ্যে এইরুপ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য শতকরা ১০০ ভাগ কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং চাকরিরত শিক্ষকদের নিরবচ্ছিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য বার্ষিক কেন্দ্রীয় অনুদানের ব্যবস্থা আছে।  

Analyze the sectors leading to the rise of National Consciousness during the British rule, How did it spread ideas on Education.

ভারতের ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে মধ্যযুগে ভারতে বিদেশী আক্রমণের ঢেউ এসছিল। হূন,তুর্কি,মোগল এবং শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা ভারত আক্রমণ করে ভারতকে দীর্ঘদিন শাসন করেছিল । কিন্ত ইংরেজ শাসনের সময়েই ভারতে ভারতবাসীদের মধ্যে শিক্ষার চেতনা জাগরিত হতে শুরু করে । এই চেতনা পরবর্তীকালে ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার লাভ করে । এর পেছনে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার শিক্ষা ও শাসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই দ্বায়ী ছিল।ব্রিটিশ শাসনের সময়ে ভারতীয়দের চেতনা জাগরিত হওয়ার কারণগুলি হল-
ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্যমূলক শিক্ষা নীতিঃ- ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ছিল ভারত শাসন করার জন্য কিছু অনুগত কর্মচারী তৈরি করা ।এই কর্মচারীদের দিয়ে যাতে পরবর্তীকালে নিজ স্বার্থকে সফলভাব রুপায়িত করা যায় এটাই ছিল ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য ।
বিদেশিদের দ্বারা শিক্ষা প্রশাসন নিয়ন্ত্রনঃ- ব্রিটিশরা ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতো। ভারতীয়দের শিক্ষাদান ব্রিটিশদের প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্য ছিল না ।ব্রিটিশদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের ব্যবসার সুবিধার জন্য কর্মী সৃষ্টি করা ।যার জন্য ব্রিটিশরা ভারতীয়দের নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে দিতনা । ভারতীয়দের উচ্ছ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হত না । এর প্রতিফলন হিসাবে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় চেতনার সৃষ্টি হতে শুরু করে। ভারতীয়রা স্পষ্ট বুঝতে পারে যে ভারতীয়দের প্রতি ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
ইংরেজি শিক্ষার প্রচলনঃ- ব্রিটিশরা উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে কোম্পানির স্বার্থে শিক্ষা নীতির পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। যাতে ভারতে ইংরেজি শিক্ষা চালু করা যায়এজন্য মিশনারি উদ্যোগ, বেসরকারী এবং সরকারী প্রচেষ্টায় ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। এতে ভারতীয়দের মধ্যে স্বাধীনতা ও জাতীয় চেতনা সম্পর্কে নতুন ধারণার সৃষ্টি হয়।
পুঁথিগত শিক্ষাঃ- ব্রিটিশরা ভারতকে শাসন করার উদ্দেশ্যে তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য ভারতে পুঁথিগত বিদ্যার বা শিক্ষার বিস্তার করতে শুরু করে। তার সাথে সাথে ইংরেজি ও বিজ্ঞান উপরও জোর দিতে থাকে। কিন্ত উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য সুযোগ দেওয়া হত না। ব্রিটিশদের মধ্যে সাদা ও কালোর মধ্যে যে পার্থক্য তা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ চেতনা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা সৃষ্টি করে ।          
ব্যবহারিক শিক্ষার অভাবঃ- ব্রিটিশদের অধীনে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয় তাতে শিক্ষার্থীদের জীবনের উন্নয়নে বা জীবন প্রতিষ্ঠার শিক্ষা চেতনা দেওয়া হত না ।কারণ ব্যবহারিক শিক্ষা লাভে ভারতীয়দের সুযোগ দেওয়া হত না। ফলে মধ্যবিত্ত কিছু ভারতীয় বিদেশে শিক্ষা লাভ করতে চেষ্টা করে । ভারতীয় শিক্ষায় কিছু করণিক, গাড়িচালক, সৈন্য, ব্যাঙ্ক কর্মচারী প্রভৃতির কাজ করতে পারে। যার ফলে ভারতকে শাসন ও শোষণ করতে ব্রিটিশদের সুবিধা হবেএর ফলে ভারতীয়রা, ভারতীয় ও ব্রিটিশদের মধ্যে যে পার্থক্য তা উপলব্দি করতে পারে । ফলে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ,একতাবোধ স্বাধীন চেতনা জন্মাতে শুরু করে । 
গণ শিক্ষাকে অবহেলাঃ- সমস্ত ভারতীয়রা শিক্ষা লাভ করুক ব্রিটিশরা তা চাই না ।কারণ ভারতীয়রা শিক্ষিত হলে বেশীদিন আর ভারতকে শাসন ও শোষণ করা যাবে না। তাই ব্রিটিশরা গণশিক্ষাকে অবহেলা করত। কিন্ত যে মধ্যবিত্ত সন্তান শিক্ষা লাভ করেছে তারা এই বিষয়টি উপলব্দি করতে পারে ফলে এরা ব্রিটিশের শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে গণ শিক্ষা দিতে শুরু করে । এতে করে যেমন শিক্ষা চেতনা বৃদ্ধি পেল, তেমনি ব্রিটিশ বিরোধী চেতনা বৃদ্ধি পেতে আরম্ব করে।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগের অভাবঃ-ব্রিটিশরা যে শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতে চালু করেছিল তা ছিল নিম্ন স্তরে । উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভারতীয়দের সুযোগ ছিল না। ফলে ইচ্ছা করলেও ভারতীয়রা উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারত না । কেবলমাত্র কিছু ধনি ব্যক্তি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যায়।এই শ্রেণির লোকেরা বিদেশে পড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে দেশের মানুষের প্রতি চেতনা অর্থাৎ জাতীয় চেতনা প্রসার ঘটাতে শুরু করে । যা পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রুপ দেয়।  
ভারতীয়দের দ্বারা নৈতিক মানের প্রচেষ্টাঃ- যে সকল ভারতীয় বিদেশে ও স্বদেশে শিক্ষা লাভ করে তারা সরকারী চাকরিতে যোগদান করে । তারাই ব্রিটিশ শাসনে থেকে ভারতীয় জাতীয় সচেতনতামূলক জাগরণের জন্য নৈতিক মানের উন্নতির প্রচেষ্টা চালায় । কিছু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রণীর উন্মেষ, উকিল, ডাক্তার,শিক্ষক,সাংবাদিক, ব্যাঙ্ক কর্মচারী প্রভৃতি ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় সচেতনতা প্রসার ও প্রচারের জন্য সকল অংশের মানুশকে অনুপ্রাণিত করে তোলে।
আন্তর্জাতিক ঘটনার প্রভাবঃ- একদিকে ব্রিটিশের অত্যাচার অন্যদিকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে বিশ্বের কিছু আন্তর্জাতিক ঘটনা যেমন, চিন, ভিয়েতনামের আন্দোলন জার্মানি, জাপানের জাতীয়তাবাদ, প্রভৃতি ঘটনা ভারতবাসীদেরকে জাতীয়তাবাদের জন্য উৎসাহদান করে।
উপসংহারঃ- একথা ঠিক যে, ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসন যদি না আসত তাহলে ভারত আজও বিচ্ছিন্নতাবাদের অন্ধকার নিমজ্জিত থাকত। ব্রিটিশ শাসনের অনুপ্রেরণায় ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। যদিও এক্ষেত্রে ব্রিটিশদের নেতিবাচক অনুপ্রেরণা ছিল ।

সর্বোপরি ব্রিটিশের প্রবর্তিত ইংরেজি তথা পাশ্চাত্য শিক্ষা ভারতবাসীকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করেছিল। 

ভারতে শিক্ষায় লর্ড কার্জনের অবদান আলোচনা কর ।

উত্তরঃ ১৮৫৪ সালের উডের ডেসপ্যাচ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে মানোন্নয়নের পরিবর্তে সাধারণতঃ সম্প্রসারণের নীতি অনুসৃত হতে থাকে। লর্ড কার্জনের আমলে এই শিক্ষানীতি আমূল পরিবর্তন হয় । লর্ড কার্জন ১৮৮২ সালে গৃহীত শিক্ষার উদারনীতির বিরুদ্ধে মত পোষণ করে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের এবং সর্বস্তরের শিক্ষায় সরকারী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উন্নত শিক্ষার কর্মসূচী গ্রহণ করেন। দেশের জাতীয়তাবাদী নেতাদের সঙ্গে কার্জনের যে বিরোধ ঘটেছিল তার মূলে ছিল সেদিনকার রাজনৈতিক চেতনা। ইংরেজ শাসনের প্রতি আমাদের বিরুদ্ধ মনোভাব কার্জনের শিক্ষানীতিকে আচ্ছন্ন করে রাখার ফলে তাঁর শিক্ষানীতির অনেক সংস্কারমূলক দিক আমাদের দৃষ্টিতে পড়েনি। স্বাধীন ভারতে ডক্টর ডি.এস. কোঠারীর সভাপতিত্বে গঠিত-শিক্ষা কমিশন (১৯৬৪-৬৬) ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত মানের অবক্ষয় লক্ষ্য করে শিক্ষার মান বজায় রাখার জন্য সুপারিশ করেছেন।ভারতের শিক্ষাকে আমরা এই শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম সামগ্রিকভাবে দেখবার সুযোগ পেয়েছি। কিন্ত এখানে উল্লেখ্য যে, পরাধীন ভারতে লর্ড কার্জন যে শিক্ষা-কমিশন নিয়োগ করেন সেই শিক্ষা-কমিশন সকল স্তরের শিক্ষা সম্বন্ধে দৃষ্টি রেখেছেন। ১৯০১ সালে লর্ড কার্জন সিমলাতে এক শিক্ষা সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। সেই সম্মেলনে ভারতের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার দুরবস্থা সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়। শিক্ষার অসমবন্টন এবং উচ্চ শিক্ষাখাতে অপরিমিত অর্থব্যয় এবং মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাখাতে ব্যয়সঙ্কোচ নীতিকে এই সম্মেলন সমালোচনা করে। সম্মেলনে পরিবেশিত তথ্য ও সমালোচনার ভিত্তিতে কার্জনের শিক্ষানীতিকে বিবেচনা করলে শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান স্বীকৃত হবে।শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সেদিন সরকারী নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সম্ভব ছিল না- গুণগত উন্নতি সাধনে যদি কার্জন সরকারী নিয়ন্ত্রণ প্রবর্তন করেন, তবে সেটা খুব অন্যায় ছিল না। আজও শিক্ষার গুণগত উন্নতির জন্য আমরা সরকারের মুখাপেক্ষী । যা হোক, কার্জন শিক্ষার লক্ষ্য বা আদর্শ-নির্ণয়ে এবং শিক্ষার কাঠামো নির্ধারণের কোন উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধন করেননি।তবে তিনি কতগুলি নির্দিষ্ট বিশেষ বিষয়ে সংস্কার সাধন করতে চেয়েছিলেন। সেগুলি এখানে উল্লেখ করা হল-
1.     লর্ড কার্জনের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় আইন গৃহীত হবার(১৯০৪) ফলে স্নাতকোত্তর পাঠ ও গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হল। এই আইনে কলেজের অনুমোদন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কঠোরতা অবলম্বন করায় শিক্ষামানের কিছুটা উন্নতি হয়।
2.     লর্ড কার্জনের প্রচেষ্টায় ১৯০৪ সাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে সরকারী সাহায্য দেওয়া হতে থাকে এবং ১৯১২ সালে এই সাহায্যের ব্যবস্থা সরকারের একটি দ্বায়িত্বে পরিগণিত হয়।
3.     উচ্চ শিক্ষায় সাহায্যের সঙ্গে সঙ্গে কারিগরী শিক্ষা, সাধারণ শিকশা, কৃষি শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা প্রভৃতি সকল স্তরের শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত পৃথক পৃথক সরকারী সাহায্যের ব্যবস্থাও লর্ড কার্জন প্রবর্তন করেন।
4.     লর্ড কার্জন মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যসূচীর সংস্কার সাধনের চেষ্টা করেন। ইংরাজী শিক্ষার উন্নয়ন, মাতৃভাষা অধ্যায়ন, বহুমুখী পাঠ্যসূচী প্রবর্তন, কারিগরি শিক্ষার জন্য ‘বি-কোর্সের’ ব্যবস্থা প্রভৃতি সংস্কারকার্যে তিনি অগ্রণী হন।
5.     উচ্চ শিক্ষার পাঠ্যসূচীতে কার্জনের প্রচেষ্টা ও নির্দেশে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্র, কারিগরী বিদ্যা, পশুপালন, বিজ্ঞান, বানিজ্য ও চারুকলা ইত্যাদি বিষয় সংযোজিত হয়।
6.     শিক্ষাক্ষেত্রে সুশাসনের জন্য লর্ড কার্জন কেন্দ্রীয় প্রাশাসনে শিক্ষা-অধিকর্তা(D.P.I) নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।

7.  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাস্তরে লর্ড কার্জন বেসরকারী শিক্ষার উদ্যোগকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষার সংকোচন ও নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষপাতী হলেও প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে তিনি শিক্ষা-প্রসার(Expansion of Education) নীতিকে গ্রহণ করেন।প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দ্বায়িত্ব বলে কার্জন স্বীকার করেন। প্রাদেশিক রাজস্ব ও জেলা বোর্ডের আয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অধিক পরিমাণে অর্থ ব্যয় করার কথা কার্জন সুপারিশ করেন।স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলিকে তাদের শিক্ষাব্যয়ের অর্ধেক সরকার থেকে সরাসরি গ্রান্ট হিসেবে দেবার ব্যবস্থা করেন।

১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার বিষয়বস্তু ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার উন্নয়নের জন্য যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেগুলি আলোচনা করো ।

উত্তরঃ ১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার বিষয়বস্তু ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে-
(১)সংস্কৃতিঃ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে শিক্ষাব্যবস্থা এগিয়ে যাবে। শিক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । এইসব বিষয় সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষণ ও গভেষণা কেন্দ্রগুলিকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
(২)মূল্যবোধঃ জাতীয় শিক্ষানীতির অন্যতম মৌলিক উদ্দেশ্য সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় সংবিধান উল্লিখিত মূল্যবোধের সৃষ্টি এবং সংরক্ষণ করা; যেমন- ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সহনশীলতা, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব । সর্বোপরি মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক চেতনা জাগাতে হবে।
(৩)ভাষাঃ ১৯৬৮ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে ভাষানীতি সম্পর্কে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তা অবিলম্বে কার্যকর করার সুপারিশ করা হয় । অহিন্দি-ভাষী রাজ্যগুলিতে হিন্দির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় ।
(৪)বই ও লাইব্রেরিঃ উচ্চমানের পাঠ্যপুস্তক লেখা ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়া হয় । সেই জন্য ভারতীয় ভাষায় বিদেশি পুস্তকের অনুবাদ প্রয়োজন। বইয়ের মানোন্নয়নের সঙ্গে লাইব্রেরিগুলির উন্নয়ন প্রয়োজন।
(৫)মাধ্যম ও শিক্ষাপ্রযুক্তিঃ প্রযুক্তিবিদ সংগ্রহ-সংক্রান্ত তথ্যাবলি জানতে ও প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ, শিক্ষক-শিক্ষণ, শিল্পকলা ও কৃষি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রযুক্তি ব্যবহার করা দরকার । শিক্ষাদান ও শিক্ষকের গুণগত মানোন্নয়ন, শিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যম ও উপকরণের জন্য শিক্ষাপ্রযুক্তির ব্যবহার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
(৬)কর্ম-অভিজ্ঞতাঃ শিক্ষাক্ষেত্রে কর্ম-অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ অংশ । কর্ম-অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্তরে উন্নত বৃত্তিমুখী কোর্স নির্বাচনে সুযোগ সৃষ্টি করবে। তাই শিক্ষার ধাপে ধাপে কর্ম-অভিজ্ঞতার অভীক্ষা প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের স্তর ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(৭)শিক্ষা ও পরিবেশঃ শিশু থেকে সকল বয়সের সকল স্তরের মানুষের জন্য পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ শিক্ষা অত্যান্ত জরুরি, এই কারণে শিক্ষার সকল স্তরে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়টিকে পাঠ্যক্রমের মধ্যে রাখতে হবে ।
(৮)গণিত শিক্ষাঃ বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতির জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত গণিত শিক্ষা । তাই গণিতকে শিক্ষার সকল স্তরে গুরুত্ব দিয়ে বুঝানো প্রয়োজন । অংক হবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আবশ্যকীয়।
(৯)বিজ্ঞান শিক্ষাঃ বিজ্ঞান শিক্ষাকে এমনভাবে সংগঠিত করা দরকার যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান সচেতনতা, সত্যানুসন্ধানী, সৃষ্টিধর্মীতা, ব্যক্তিনিরপেক্ষতার প্রবণতা,সৌন্দর্যপ্রীতি ইত্যাদি মূল্যবোধগুলি জাগতে পারে । বিজ্ঞান দশম শ্রেণি পর্যন্ত হবে আবশ্যকীয় । মেয়েরা যাতে বিজ্ঞান, কারিগরি, বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন পেশাগত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
(১০)খেলাধুলা ও শারীরশিক্ষাঃ প্রস্তাবনাপত্রে বলা হয়েছে- শারীরশিক্ষার জন্য স্কুলে, কলেজে, খেলার মাঠ, সরঞ্জাম, প্রশিক্ষক, শারীরশিক্ষক, শহরাঞ্চলে খোলা জায়গায় খেলাধুলার জন্য সংরক্ষিত ক্ষেত্র রক্ষা করা প্রভৃতি পরিকাঠামোগত উন্নতি ঘটাতে হবে। বোর্ডিংসহ স্পোর্ট কমপ্লেক্স তৈরি করতে হবে এবং NSS কে আরও প্রসারিত ও মজবুত করতে হবে।

(১১)যুবসম্প্রদায়ের ভূমিকাঃ জাতীয় ও সামাজিক বিকাশে যুবসম্প্রদায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তার বাইরে যুবসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধির সুপারিশ করার উদ্দেশ্য NSS,NCC প্রভৃতি কর্মসুচিকে আরও জোরদার করতে হবে। 

‘ওয়ার্ধা পরিকল্পনা’ কী ?

1. ‘ওয়ার্ধা পরিকল্পনা’ কী ?  
উত্তরঃ ‘ওয়ার্ধা পরিকল্পনা’ হচ্ছে প্রাক স্বাধীনতা যুগে গান্ধীজী প্রদত্ত স্বদেশভিত্তিক এক জাতীয় শিক্ষা পরিকল্পনা ।
১৯৩১ সালে গোল টেবিল বৈঠকে গান্ধীজী ব্রিটিশ সরকার প্রবর্তিত ইংরাজি ভাষা কেন্দ্রিক ভারতীয় শিক্ষানীতির কঠোর সমালোচনা করেন। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বলে ১৯৩৭ সালে ভারতের ৭টি প্রদেশে কংগ্রেসি মন্ত্রী সভা দেশ শাসনের অধিকার পেলে গান্ধীজী প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন ও অবৈঠনিক করার সুযোগ কাজে লাগালেন । তিনি তাঁর হরিজন পত্রিকায় ‘নঈ তালিম’ নতুন শিক্ষার পরিকল্পনাটি প্রকাশ করে নিজের শিক্ষা ভাবনা ও ভারতের প্রেক্ষিতে জনশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার  কথাটি জানিয়ে দিলেন ।
অবশেষে ১৯৩৭ সালে ওয়ার্ধা সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলনে গান্ধীজীর এই শিক্ষা পরিকল্পনার রূপরেখা গ্রহণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হল । ওয়ার্ধায় গান্ধীজীর শিক্ষা পরিকল্পনাটি গ্রহণ করা হয়েছিল বলে এই পরিকল্পনাকে বলা হয় ওয়ার্ধা পরিকল্পনা । এই পরিকল্পনার মুখ্য বিষয়গুলি হচ্ছে-
(১) জাতীয় স্তরে সামগ্রিক বাধ্যতামূলক অবৈঠনিক শিক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে ।
(২) মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের বিষয়টি গ্রহণ করতে হবে।
(৩)শিশু শিক্ষার্থীর শিক্ষা একটি উৎপাদনাত্মক শিল্পকে কেন্দ্র করে সংগঠিত করতে হবে।
(৪) এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই এই শিক্ষার ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
যা হোক, ওয়ার্ধায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ডঃ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে তার ওপর বুনিয়াদি শিক্ষার একটি পাঠ্যক্রম তৈরির দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় এবং বিশদ আলোচনার পরে ঐ কমিটি একটি প্রতিবেদন পেশ করেন এবং ১৯৩৮ সালে হরিপূরা কংগ্রেসের অধিবেশনে গৃহীত হয় ওয়ার্ধা পরিকল্পনামাফিক জাকির হোসেনের কমিটির প্রস্তাবগুলি ।  
2. ‘Operation Blackboard’ কী ?
 উত্তরঃ একটি বিদ্যালয়কে সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য, একটি পাকাবাড়ি, পানীয়জলের ব্যবস্থা, শৌচাগারের ব্যবস্থা, শ্রেণীকক্ষ পরিচালনার উপকরণসমূহ যেমন-ব্ল্যাকবোর্ড, চক, ডাস্টার, ম্যাপ, চার্ট এবং কমপক্ষে ২ জন শিক্ষক(এদের মধ্যে একজন মহিলা) নিয়োগের যে ব্যাপক পরিকল্পনা জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬তে গ্রহণ করা হয়েছে তাকেই ‘Operation Blackboard’  বলা হয় ।  
3. ‘মুক্ত বিদ্যালয়’ কাকে বলে ?
উত্তরঃ পরিবর্তনশীল সমাজ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ যেখানে প্রতি মুহূর্তে জ্ঞানের সম্প্রসারণ ঘটছে, সেখানে নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক শিক্ষা স্থায়ীভাবে মানুষের চাহিদা পরিতৃপ্ত করতে পারে না । আর এই ঘাটতি মেটানোর জন্য,প্রথামুক্ত শিক্ষার(Non-formal Education) ব্যবস্থা করা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে ।এই প্রথামুক্ত শিক্ষাকে পরিচালনার জন্য বর্তমানে বিদ্যালয় স্তরে যে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষালয় স্থাপিত হয়েছে  সেগুলিকেই বলা হয় ‘মুক্ত বিদ্যালয়’(যেমন,NIOS) অনুরূপভাবে উচ্চস্তরে এই প্রথামুক্ত শিক্ষাকে পরিচালনার জন্য বর্তমানে যে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষালয় স্থাপিত হয়েছে সেগুলিকেই বলা হয় ‘মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়’ (যেমন IGNOU)। আবার অন্যভাবে বলা যায়, প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থায় কঠোর নিয়মনীতি বাদ দিয়ে বা অনেকাংশে শিথিল করে যে বিদ্যালয়ের মাধ্যমে বিকল্প শিক্ষা দেওয়া হয়  ‘মুক্ত বিদ্যালয়’ বলে।   

4. বিশ্বায়ন কাকে বলে ?

Answer: বিশ্বায়ন বলতে জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত করার এক প্রক্রিয়াকে বুঝায় ।