Friday, 8 January 2016

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করো ।

 ১৯১০ সালের পড়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের তেমন কিছু কাজ না হলেও শিক্ষা আন্দোলনের ধবনি-প্রতিধ্বনি এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব প্রবাহিত হল ১৯২০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়েই স্তিমিত স্রোতে নতুন জোয়ার লেগে সৃষ্টি হল নতুন এক আন্দোলন তরঙ্গ। অসহযোগ(Non-Cooperation) আন্দোলনের রাজনৈতিক তরঙ্গের সাথে সাথে এল শিক্ষা আন্দোলনের নতুন পর্যায়।
  প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সংকটের মুখে ইংরেজ সরকার একদিকে দান করলেন মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন স্নগস্কার,অপরদিকে দিলেন রাওলাট আইন এবং জালিওয়ানওয়ালাবাগের গুলি বৃষ্টি। নরমপন্থী নেতারা এবার ইংরেজ শাসকের কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করলেন। কিন্তু দেশপ্রেমিক গণশক্তি হল বিক্ষোভে উদ্বেল। খিলাফতের প্রশ্নে মুসলিমরা ক্ষুদ্ধ। শুরু হল হিন্দ-স্বরাজ খিলাফত আন্দলন(১৯২০-২২)। ১৯০৫ সালে যে বয়কট অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল, সেই অস্ত্রই আবার প্রয়োগ করা হল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জনের ডাক দেওয়া হল। গান্ধিজি ‘এক বছরের মধ্যে স্বরাজ’ –এর প্রতিশ্রুতি দিলেন। আত্মপ্রত্যয় নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কলেজ ছাড়ল।
  এবারকার আন্দোলনে মুসলিম ছাত্ররা দাঁড়াল প্রথম সারিতে। আলীগড় বিশ্ব বিদ্যালয় বয়কটের সুত্রে বর্জনকারী ছাত্র শিক্ষকরা গড়লেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া।(স্বাধীন ভারতের অন্যতম রাষ্ট্রপতি ডঃ জাকির হোসেন ছিলেন এই উদ্যোগের সাথে জড়িত।জামিয়া মিলিয়া আজও সগৌরবে কাজ করছে দিল্লিতে)। ছয় মাসের মধ্যে এই আন্দোলন সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। গুজরাট বিদ্যাপীঠ,কাশী বিদ্যাপীঠ,মহারাষ্ট্র বিদ্যাপীঠ,বিহার বিদ্যাপীঠ,বঙ্গীয় জাতীয় বিদ্যালয় প্রভৃতি বিদ্যালয় স্তরের প্রতিষ্ঠান মাথা তুলে দাঁড়াল।
  ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রে গড়ে উঠল অনেক মেডিক্যাল স্কুল, টেকনিক্যাল স্কুল, আর্ট স্কুল, আইন কলেজ, সাধারণ কলেজ এবং জাতীয় স্কুল।বিহার-উরিষ্যায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা হল ৪৪২, বাংলাদেশে ১৯০, বোম্বাইতে ৮৯, উত্তর প্রদেশে ১৩৭। ১৯২১ সালের মধ্যে সারা ভারতে বিদ্যালয়ের সংখ্যা হল ১৩৪৯ এবং ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৭৮৫৭১। গান্ধিজি শিক্ষার সাথে গঠনমূলক কাজও যোগ করলেন। তিনি ঘোষণা করলেন সর্বনিম্ন পরিমাণ সুতো না কাটলে কোন শিশুরই শিক্ষার অধিকার নেই।

  নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও শিক্ষা আন্দোলন সাফল্যের সাথেই এগোচ্ছিল। কিন্তু এবারও রাজনৈতিক আন্দোলনের গতিপ্রকৃতিই শিক্ষা আন্দোলনের ভাগ্য নির্ধারণ করল। চৌরিচৌরা ঘটনার পর একক দায়িত্বেই গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন। সেই সঙ্গে ১৯২২ সালেই জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় শেষ হল।