১৯৮৬ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি এবং ১৯৯২ সালের ঐ
শিক্ষা নীতির সংশোধিত লক্ষ্য অনুযায়ী যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল সেগুলির
মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের দেশের
সমস্ত শিশুকে ব্যবহারোপযোগী এবং নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষার
(অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) অন্তর্ভুক্ত করা । এই লক্ষ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার ২০০০
সালে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প চালু করে । সর্বশিক্ষার এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত
করার জন্য সর্বশেষ সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০১০ সাল।অর্থাৎ ২০১০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে
যাতে আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করা যায় তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সুনির্দিষ্ট
কর্মসূচী রচনা করেছেন।
সর্বশিক্ষা প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ
বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(১) সারা দেশে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়
শিক্ষার মানের উন্নতি সাধন করা এবং এই শিক্ষা যাতে শিশুর জীবনে কার্যকরী প্রভাব
বিস্তার করতে পারে তার ব্যবস্থা করা ।
(২) সর্বশিক্ষা অভিযানকে সাফল্যমণ্ডিত করে
তোলবার জন্য কেন্দ্রীয় স্তর থেকে তৃনমূল স্তর পর্যন্ত দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ করা
। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের সার্থক রুপায়নের জন্য একদিকে যেমন রাজ্য
সরকারগুলিকে এই প্রকল্পে সামিল করেছেন,অন্যদিকে তেমনই বিভিন্ন জেলা পরিষদ, গ্রাম
পঞ্চায়েত, বেসরকারি সংস্থা, ক্লাব, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, প্রভৃতিও যাতে এই
প্রকল্প রুপায়নে সামিল হয় তার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
(৩) এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থা
এবং ব্যক্তি যাতে স্থানীয় প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যকে বজায়
রেখে নিজ নিজ কর্মসূচীর প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারে সে বিষয়ে ঐসব
সংস্থা ও ব্যক্তিকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
সর্ব শিক্ষার বিশেষ তাৎপর্য হল ১৪ বছর বয়স
পর্যন্ত বিদ্যালয় শিক্ষার কার্যকারিতার উন্নতিসাধন করা এবং এক একটি জনগোষ্ঠীর
পরিচালনায় সমাজসেবামুলক মনোভাব নিয়ে নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের উপযুক্ত মানের
ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা । এই অভিযান আরও চেষ্টা করবে যাতে
ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষাক্ষেত্রে যে লিঙ্গবৈষম্য এবং সামাজিক বৈষম্য রয়েছে তা যেন
দূরীভূত হয় । সর্বশিক্ষা অভিযান মেয়েদের, তপশিলী জাতি, উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত
শিশুদের এবং প্রতিবন্ধী ও সহায় সম্বলহীন শিশুদের শিক্ষার চাহিদা পূরণের প্রতি
বিশেষ লক্ষ্য রাখবে ।
সর্বশিক্ষা অভিযানের বিশেষ লক্ষ্যগুলি হল-
(১) ২০০৩ সালের মধ্যে আমাদের দেশের সমস্ত শিশুকে
বিদ্যালয়ে ভর্তি করা, শিক্ষা নিশ্চিতকরণ কেন্দ্র (Education Guarantee Centre) পরিবর্ত বিদ্যালয় (Alternative Schools), এবং বিদ্যালয়ে প্রত্যাবর্তন ক্যাম্প(Back to School Camps) স্থাপন করা।
(২) ২০০৭ সালের মধ্যে এদেশের সমস্ত শিশু যাতে
পাঁচ বছরব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে তার ব্যবস্থা করা।
(৩) ২০১০ সালের মধ্যে এদেশের সমস্ত শিশু যাতে
আট বছরব্যাপী ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষা লাভ
করে তার ব্যবস্থা করা।
(৪) জীবন যাপন সহায়ক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ
করে সন্তোষজনক গুণগত মানবিশিষ্ট ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া।
(৫) ২০০৭ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তর এবং ২০১০
সালের মধ্যে ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষাস্তর থেকে সমস্ত রকম লিঙ্গ ও সামাজিক বৈষম্য
দূর করা।
(৬) ২০১০ সালের মধ্যে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত
বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সমস্ত ছাত্রের একজনও যাতে বিদ্যালয় ছেড়ে না যায় তা সুনিশ্চিত
করা।