Wednesday, 21 October 2015

সর্বশিক্ষা অভিযান

১৯৮৬ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি এবং ১৯৯২ সালের ঐ শিক্ষা নীতির সংশোধিত লক্ষ্য অনুযায়ী যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের দেশের সমস্ত শিশুকে ব্যবহারোপযোগী এবং নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষার (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) অন্তর্ভুক্ত করা । এই লক্ষ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার ২০০০ সালে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প চালু করে । সর্বশিক্ষার এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য সর্বশেষ সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০১০ সাল।অর্থাৎ ২০১০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে যাতে আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করা যায় তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী রচনা করেছেন।
সর্বশিক্ষা প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(১) সারা দেশে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয় শিক্ষার মানের উন্নতি সাধন করা এবং এই শিক্ষা যাতে শিশুর জীবনে কার্যকরী প্রভাব বিস্তার করতে পারে তার ব্যবস্থা করা ।
(২) সর্বশিক্ষা অভিযানকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলবার জন্য কেন্দ্রীয় স্তর থেকে তৃনমূল স্তর পর্যন্ত দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ করা । অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের সার্থক রুপায়নের জন্য একদিকে যেমন রাজ্য সরকারগুলিকে এই প্রকল্পে সামিল করেছেন,অন্যদিকে তেমনই বিভিন্ন জেলা পরিষদ, গ্রাম পঞ্চায়েত, বেসরকারি সংস্থা, ক্লাব, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, প্রভৃতিও যাতে এই প্রকল্প রুপায়নে সামিল হয় তার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
(৩) এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তি যাতে স্থানীয় প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যকে বজায় রেখে নিজ নিজ কর্মসূচীর প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারে সে বিষয়ে ঐসব সংস্থা ও ব্যক্তিকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
সর্ব শিক্ষার বিশেষ তাৎপর্য হল ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত বিদ্যালয় শিক্ষার কার্যকারিতার উন্নতিসাধন করা এবং এক একটি জনগোষ্ঠীর পরিচালনায় সমাজসেবামুলক মনোভাব নিয়ে নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের উপযুক্ত মানের ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা । এই অভিযান আরও চেষ্টা করবে যাতে ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষাক্ষেত্রে যে লিঙ্গবৈষম্য এবং সামাজিক বৈষম্য রয়েছে তা যেন দূরীভূত হয় । সর্বশিক্ষা অভিযান মেয়েদের, তপশিলী জাতি, উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত শিশুদের এবং প্রতিবন্ধী ও সহায় সম্বলহীন শিশুদের শিক্ষার চাহিদা পূরণের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখবে ।
সর্বশিক্ষা অভিযানের বিশেষ লক্ষ্যগুলি হল-
(১) ২০০৩ সালের মধ্যে আমাদের দেশের সমস্ত শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা, শিক্ষা নিশ্চিতকরণ কেন্দ্র (Education Guarantee Centre) পরিবর্ত বিদ্যালয় (Alternative Schools), এবং বিদ্যালয়ে প্রত্যাবর্তন ক্যাম্প(Back to School Camps) স্থাপন করা।
(২) ২০০৭ সালের মধ্যে এদেশের সমস্ত শিশু যাতে পাঁচ বছরব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে তার ব্যবস্থা করা।
(৩) ২০১০ সালের মধ্যে এদেশের সমস্ত শিশু যাতে আট  বছরব্যাপী ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষা লাভ করে তার ব্যবস্থা করা।  
(৪) জীবন যাপন সহায়ক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে সন্তোষজনক গুণগত মানবিশিষ্ট ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া।
(৫) ২০০৭ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তর এবং ২০১০ সালের মধ্যে ন্যুনতম আবশ্যিক শিক্ষাস্তর থেকে সমস্ত রকম লিঙ্গ ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা।

(৬) ২০১০ সালের মধ্যে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সমস্ত ছাত্রের একজনও যাতে বিদ্যালয় ছেড়ে না যায় তা সুনিশ্চিত করা। 

Wednesday, 7 October 2015

Use of mass media in teaching-learning: Radio,TV, Newspaper etc.

‘গণ’ কথার অর্থ হল জনগণ, আর ‘মাধ্যম ’ কথাটির অর্থ হল সংযোগ, যাকে বলা হয় গণমাধ্যম বা Mass Media . গণ এবং মাধ্যম মিলে হয়েছে গণমাধ্যম । নিজের অনুভুতি ও অভাব অভিযোগ অন্যকে জানানো বা অপরের অনুভুতি জানানোর জন্য যে বিশেষ মাধ্যমের প্রয়োজন হয়, তাকেই বলা হয় গণমাধ্যম । এই সব গণমাধ্যমগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল সংবাদপত্র, দূরদর্শন, বেতার, বিজ্ঞাপন, প্রচার পুস্তিকা, দেওয়াল পত্রিকা ইত্যাদি । এগুলি শিক্ষার পরোক্ষ মাধ্যম হিসাবে শিক্ষার কাজে সহায়তা করে । এগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণচেতনা সৃষ্টি করে । গণমাধ্যমগুলি মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে আদর্শ আচরণ ও মূল্যবোধ গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে । তাই আধুনিক শিক্ষায় গণমাধ্যমের ভুমিকাকে কোনভাবে অস্বীকার করা যায় না । এই ধরণের মাধ্যমগুলি মানুষের অবসরকালে, তাকে শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা সরবরাহ করে থাকে। তাই অনেক শিক্ষাবিদ এগুলিকে শিক্ষার অবসরকালীন মাধ্যম আখ্যা দিয়েছেন। 
বেতার
বেতারের শিক্ষামূলক উপযোগিতাঃগণশিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বেতারের শিক্ষামূলক দিক হল-
(১) আগ্রহ সৃষ্টিঃ বেতার মৌখিক শিক্ষণকে সহায়তা করে। বেতারের শ্রবণধর্মী অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর মনোযোগকে বেশি আকর্ষণ করে। ফলে শিক্ষা গ্রহণের প্রতি শিক্ষার্থী বেশি আগ্রহ দেখায় ।
(২) সহজলভ্য ও কম ব্যয়বহুলঃ আমাদের দেশে বহু সংখ্যাক মানুষ নিরক্ষর । তাই যারা লিখতে পড়তে জানে না এবং যারা দেখতে পায় না তাদের পক্ষে বেতার বিশেষ উপযোগী মাধ্যম । তাছাড়া বেতার কম ব্যয়বহুল মাধ্যম ।
(৩) বিষয়বস্তুর বাস্তবতাঃ বেতারের মাধ্যমে কোন বিষয়বস্তু সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুর বাস্তবতা খুঁজে পায় ।
(৪)নির্ভুল ও তথ্য সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতাঃ বেতারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা যায় ।ফলে বিষয়বস্তু নির্ভুল ও তথ্যসমৃদ্ধ হয়।
(৫) ঘটমান তথ্য পরিবেশনঃ বেতারে যেকোন ঘটমান তথ্য শিক্ষার্থীদের সামনে তৎক্ষণাৎ উপস্থাপন করা যায় ।
(6)সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বেতারের মাধ্যমে দেশ বিদেশের রাজনইতিক,সামাজিক ঘটনা, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের খবরাখবরের সঙ্গে পরিচিত হয় ।
(৭) বেতারে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয় । বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা সম্পর্কে বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রচারিত হয় । এবং তার মধ্যে দিয়ে চিন্তা, ভাবনা,স্মৃতিচারণ আলোচনা ও পর্যালোচনা শক্তি বৃদ্ধি পায় ।
(৮) বেতারে প্রচারিত সংগীত , নাটক, প্রহসন ইত্যাদি অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের শিক্ষাচাহিদার পরিতৃপ্তি ঘটায়।  
অসুবিধাঃ বেতার মর্তমানে শিক্ষার একমুখী মাধ্যম হিসাবে শ্রোতাদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে না ।দূরদর্শনের মত বেতারেও বিজ্ঞাপন বেশি পরিমাণে প্রচার হয় ।  বেতারেও যে অপসংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় না এমন নয় । বেতারে প্রচারিত কথা শুধু কানে শোনা যায় দেখা যায় না । দেখে শুনে শিক্ষার মধ্যে যে পূর্ণতা থাকে রেডিও সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে না ।তাছাড়া রেডিওতে প্রচারিত বিষয়বস্তু সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে না পারলে পুনরায় সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করার সুযোগ নেই ।  
দূরদর্শনঃ
(ক) বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতাঃ দূরদর্শনের মাধ্যমে কোন অতীত ঘটনা বা ঘটমান বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা যায় । ফলে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত হয়ে ওঠে এবং তাদের শিখন সহজ হয় ।
(খ) জ্ঞানের পূর্ণতাঃ দূরদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী একই সঙ্গে শ্রবণ ও দর্শনের দ্বারা জ্ঞান লাভ করে । একই সঙ্গে দুটি ইন্দ্রিয় সক্রিয় হওয়ায় জ্ঞান অনেক বেশি পূর্ণতা লাভ করে ।
(গ) প্রেষণা সঞ্চারঃ দূরদর্শনের বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহের সুযোগ দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষামুখী তীব্র প্রেষণা সঞ্চার হয় ।
(ঘ) আদর্শ শিক্ষণ অভিজ্ঞতাঃ দূরদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদেরকে আদর্শ শিক্ষক দ্বারা এবং আদর্শ শিক্ষণের অভিজ্ঞতা দেওয়া সম্ভব হয় । বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে এদুসেটের ব্যবহার করা হচ্ছে ।
(ঙ) দক্ষতা গঠনঃ দূরদর্শনে অনেক বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষার অভিজ্ঞতার প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় । ফলে শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
(চ) বিনোদনমূলক শিক্ষাঃ দূরদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কর্মসূচী প্রচার করা হয় । এগুলি থেকে শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষামূলক উপাদানগুলি গ্রহণ করতে পারে।
অসুবিধাঃ বর্তমানে দূরদর্শনে নানা কুরুচিকর দৃশ্য ও অপসংস্কৃতি প্রচার করা হয় । বিনোদনের নামে যৌনতাকে নগ্নভাবে প্রচার করা হয় । ফলে শিশুর কোমল মনকে বিপথে পরিচালিত করে। শিক্ষামূলক বিষয়ের চাইতে বিজ্ঞাপনের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । ফলে এই গণমাধ্যমটি ধীরে ধীরে শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযোগিতা হারাচ্ছে ।

সংবাদপত্র
সংবাদপত্রের শিক্ষামূলক ভুমিকাঃ সংবাদপত্র আধুনিক বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম ।আধুনিক যুগে সংবাদপত্র সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং বহুল প্রচারিত একটি গণমাধ্যম।সংবাদপত্রের মাধ্যমে সামাজিক মানুষের ম্নভাব,দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ইত্যাদি জাগ্রত করা যায়। প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে সংবাদপত্রের শিক্ষামূলক উপযোগিতাগুলি হল- 
(১) আদর্শ জনমত গঠনঃ গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সাফল্য অনেকাংশে নাগরিকদের চিন্তাধারার ঐক্য ও সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করে । সংবাদপত্র নাগরিকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ করে, বিভিন্ন সামাজিক ঘটনার প্রতি প্রয়োজনীয় মতামত গঠন করে শিক্ষার কাজে সাহায্য করে ।
(২) সংস্কারমূলক দ্বায়িত্বঃ সমাজের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি কোন বিসদৃশ আচরণ সম্পাদন করে তবে সংবাদপত্র এবিষয়ে তাকে সচেতন করে দিতে পারে।এভাবে সংবাদপত্র অনেক সময় ব্যক্তির আচরণ সংশোধনের দ্বায়িত্ব পালন করে ।
(৩) মানসিক বিকাশঃ সংবাদপত্রে ব্যক্তির চিন্তন প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করা হয় ।সংবাদপত্রের সেই সব বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় পাঠককে । ফলে ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটে ।
(৪) গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশঃ সংবাদপত্র জনমত গঠনেও সাহায্য করে । সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে ব্যক্তির গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ হয় । 
(৫) আগ্রহ সঞ্চারঃ সংবাদপত্রে বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় । এগুলি পাঠ করে ব্যক্তি শিক্ষা বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে ।  
(৬) শিক্ষানীতি নির্ধারণঃ যে কোন রাষ্ট্র একটি সার্থক শিক্ষা পরিবেশ রচনা করার সময় সংবাদপত্রে প্রকাশিত মতামতের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে ।অর্থাৎ সংবাদপত্র আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।